রাতে খুন করে সকালে ছবি তুলতে যায় সাংবাদিক
শাজাহানপুর (বগুড়া) প্রতিনিধি জিয়াউর রহমান: বগুড়ার শাজাহানপুরে জয়নার আবেদীন (৬৫) নামে এক মাদ্রাসার নৈশপ্রহরীকে গলা কেটে হত্যার ঘটনায় তানভিরুল ইসলাম (২১) নামে এক সাংবাদিককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
তানভিরুল ইসলাম উপজেলার সুজাবাদ উত্তরপাড়ার এনামুল হক মিঠুর ছেলে। সে ঢাকা থেকে প্রকাশিত দৈনিক মাতৃভূমির খবর নামের একটি পত্রিকার বগুড়া জেলা প্রতিনিধি।
শনিবার বিকেলে শাজাহানপুর থানার ওসি এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
থানা পুলিশ সূত্রে জানা যায়, তানভিরুল ইসলাম প্রায় প্রতিরাতেই মাদ্রাসার মাঠে মাদক সেবন করতেন। বিষয়টি জানতে পেরে নৈশপ্রহরী জয়নাল আবেদীন তাকে মাদ্রাসা মাঠে মাদক সেবন করতে নিষেধ করে আসছিলেন। বৃহস্পতিবার (২৭ মে) রাতে পুনরায় মাদরাসার মাঠে মাদক সেবন করতে দেখে নৈশপ্রহরী তাকে গালিগালাজ করেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে তানভিরুল নৈশপ্রহরীকে ধাক্কা দিলে নৈশপ্রহরীও তানভিরকে থাপ্পড় মারে। মাদক সেবনের বিষয়টি মাদ্রাসার ম্যানেজিং কমিটিকে জানিয়ে দেবে বলে ভয় দেখিয়ে নৈশপ্রহরী মাদ্রাসার কক্ষে চলে যায়। পিছে পিছে তানভির কক্ষে ঢুকে বার্মিজ চাকু দিয়ে নৈশপ্রহরী জয়নাল আবেদীনের পেটে ছুরিকাঘাত করে এবং গলা কেটে ফেলে। এরপর মাদরাসার পার্শ্বে পুকুরে চাকু ফেলে দিয়ে পুকুরের পানিতে হাত-মুখ পরিষ্কার করে বাড়িতে যায়। বাড়ি গিয়ে গোসল করে ঘুমিয়ে পড়ে। পরের দিন শুক্রবার সকালে হত্যার খবর জানাজানি হলে গ্রামের লোকজনের সাথে ঘটনাস্থলে যান তানভির। সেখানে পুলিশ ও উৎসুক জনগনের সামনে নিজেকে সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে গলায় আইডি কার্ড ঝুলিয়ে তথ্য নিতে শুরু করেন। উপস্থিত অন্যান্য সাংবাদিকরা তথ্য নিয়ে চলে গেলেও তানভির শেষ পর্যন্ত ছিলেন। বেলা সাড়ে ৩টার দিকে পুলিশের আরেকটি দল মাদরাসা চত্বরে গেলে তানভির সেখানে উপস্থিত হয়ে নিজেকে সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে এলাকার কয়েকজন মাদকসেবীর নাম ঠিকানা দিয়ে পুলিশকে জানায় যে তারা এই হত্যার সাথে জড়িত থাকতে পারে। তানভীরের অতি উৎসাহী আচরণে পুলিশের সন্দেহ হলে তাকে আটক করা হয়। পরে তার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী পুলিশ আরও তিন যুবককে আটক করেন। রাতে পুুলিশ চারজনকে পৃথকভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তানভীর নিজে এই হত্যার সাথে জড়িত বলে স্বীকার করে।
উল্লেখ্য, গত শুক্রবার সকালে শাজাহানপুর উপজেলার সুজাবাদ উত্তরপাড়া দাখিল মাদ্রাসার একটি কক্ষ থেকে নৈশপ্রহরী জয়নাল আবেদীনের (৬৫) নাড়ী-ভুড়ি বের হওয়া গলা কাটা লাশ উদ্ধার করে থানা পুলিশ। জয়নাল আবেদীন উপজেলার সুজাবাদ উত্তরপাড়া গ্রামের মৃত মীর বক্্েরর ছেলে।
শাজাহানপুর থানার ওসি আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, গ্রেপ্তারকৃত আসামীকে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। এঘটনায় নিহতের ছোট ছেলে আবিদুল ইসলাম বাদী হয়ে থানায় মামলা দায়ের করেছেন।