বগুড়া সংবাদ ডটকম ( শেরপুর প্রতিনিধি কামাল আহমেদ)
বগুড়ার শেরপুরে উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক ও ওসিএলএসডি কর্মকর্তার কোটি টাকার বানিজ্য, স্বজনপ্রীতি ও দূর্নীতি এবং ২ শতাধিক মিলের লাইসেন্স বাতিল করায় মিল মালিকদের মাঝে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। লাইসেন্সের শর্ত পালন না করায় বাতিল করা হয়েছে বরাদ্দ খাদ্য কর্মকর্তা এমন কথা বললেও মিল মালিকরা বলছেন ভিন্ন কথা। তাদের দাবী যারা টাকার লেনদেন করেছেন কেবল তাদেরই মিলের একাধিক লাইসেন্সের বিপরিতে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। কতিপয় মিল মালিক, খাদ্য গুদামের কর্মকর্তা ও খাদ্য নিয়ন্ত্রক অফিস মিলে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেটের মাধ্যমে সবকিছু নিয়ন্ত্রন করা হচ্ছে।
প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, শেরপুর উপজেলায় হাসকিং, সেমি অটো মিল সহ লাইসেন্স প্রাপ্ত মিলের সংখ্যা ৫১৭টি। এছাড়াও ৪টি অটো মিল রয়েছে। এরমধ্যে ৩৫৬টি মিলের বিপরিতে ৪ হাজার ৯শ ৯৩ টন সিদ্ধ চালের বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। চলতি আমন মৌসুমে সিদ্ধ চাল ক্রয়ে বয়লার চাতাল, হাউজ, মিলের মটর, গুদামের বিবরণ ও বিদ্যুতের লোডের উপর বিবেচনা করে এবং একই মিলের নামে একাধিক লাইসেন্স বিশ্লেষন করে এ বছর উপজেলা মিল মালিকদের মাঝে বরাদ্দ বন্ঠনের দাবী করলেন উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক সেকেন্দার রবিউল ইসলাম। অপরদিকে মিল মালিদের দাবী খাদ্য নিয়ন্ত্রক ও শেরপুর খাদ্য গুদামের কর্মকর্তা এবং কতিপয় মিল মালিক মিলে শক্তিশালী সিন্ডিকেটের মাধ্যমে নানা অনিয়ম দূর্নীতির আশ্রয় গ্রহন করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ তুলেছেন। তারা বলছেন যে কারনে আমাদের লাইসেন্স এর বিপরিতে বরাদ্দ দেয়া হয়নি ওই সকল কারন অব্যাহত থাকার পরেও অনেক মিলের বিপরিতে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। ৩৫৬ টি বরাদ্দ পাওয়া মিলের মধ্যে ৬৫ টি মিলের নামে একাধিক বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এমনকি একটি মিলের ৩ থেকে ৭টি লাইসেন্স থাকায় প্রতিটি লাইসেন্সের বিপরিতেই বরাদ্দ পেয়েছে অনেকেই। অপরদিকে সরকারের সকল শর্তই পুরণ করার পরেও বরাদ্দ মিলেনি এমন মিলের ৪টি। মিলগুলো হলো মির্জাপুরের হাসান চাল কল, হামছায়াপুরের ভুঁইয়া চাল কল, কল্যানীর বিশ্বাস চাল কল ও সরকার চাল কল।
মিল মালিকদের অভিযোগে আরো জানা যায়, শেরপুর খাদ্য গুদামের কর্মকর্তা এস এম আতিকুল ইসলাম মিলের ক্যাপাসিটি মাপার নামে একটি সিন্ডেকেটের মাধ্যমে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। যে সকল মিলাররা তার চাহিদা পুরণ করতে ব্যার্থ হয়েছে তাদের নামে একটি লাইসেন্স রেখে বাকি লাইসেন্সের বিপরিতে বরাদ্দ বাতিল করার পাশাপাশি ক্যাপাসিটি কমে দিয়েছেন। এমনই একটি মিল হলো সূর্যমূখী চাল কল, যার ক্যাপসিটি এবং দুই ভাই সেমি অটোর ক্যাপাসিটি প্রায় সমান হলেও প্রমথটি বরাদ্দ ফেয়েছে ৭ টন ৬শ ৫০ কেজি, পক্ষান্তরে দ্বিতীয় মিলের নামে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ১৭ টন ৪শ কেজি।
প্রাপ্ত তথ্যে আরো জানা যায়, গত অর্থ বছরেও শেরপুরে এমন একটি সিন্ডেকেটের মাধ্যমে সেমি অটো মিলের বরাদ্দ বৃদ্ধির নামে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। এ ছাড়া আতপ চালের বরাদ্দ কয়েকটি মিলের উপর ভাগ করে সিন্ডিকেট চক্রটি কোটি টাকার বানিজ্য করেন। এবং শেরপুর খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এস এম আতিকুল ইসলামের চাহিদা মত টাকা না দিতে পারলে সে সহ অন্যান্য কর্মচারিরাও মিল মালিকদের সঙ্গে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ভাবে অসাদাচরণ করারও অভিযোগ উঠেছে।
এ ছাড়াও শেরপুর খাদ্য গুদামে চাল তোলার সময় আলাদাভাবে মোটা অংকের টাকা না দিলেই হয়রানি, মোটা অংকের টাকা আদায় করতে নানা কৌশল প্রয়োগ, ডবিøউ কেসি লেখা বাবদ টাকা আদায় ও পে-অর্ডার নেয়ার সময় মিল মালিকরা চাহিদা মত টাকা দিতে না চাওয়ায় তাদের সাথে খারাপ আচরণ করায় মিল মালিকরা ক্ষোভে ফুসছেন।
শেরপুর খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এস এম আতিকুল ইসলাম জানান, যে সকল মিল মালিকরা একটি চাতার, গোডাউন, চিকনি ইত্যাদি দিয়ে ২টি লাইসেন্স করা আছে একটি সেমি অটো একটি স্থাপনা লাইসেন্স তাদের বরাদ্ধ ও লাইসেন্স আগামী জুন মাস পর্যন্ত সময় দিয়ে স্থগিত করা হয়েছে।
মিল মালিক সমিতির সভাপতি আলহাজ্ব আব্দুল কুদ্দুস ভুইয়া ও সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব আব্দুল হামিদ জানান, অফিসাররা তাদের ইচ্ছেমত বরাদ্দ দিয়েছেন। তাতে অনেক মিলার ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন। উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক আমাদের ফোন রিসিভ করেননা, এমনকি কতিপয় মিলার ব্যাতিত আমাদের সাথে বিষয়টি নিয়ে কোন আলোচনা করেননা। আর বরাদ্দের চিঠি এখনো দেননি, তিনি এমন সময় চিঠি দেবে যে মিল মালিকরা পে-অর্ডার করতে হিমশিম খাবেন। তাই আমরা আগামি রবিবার উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক অফিসে যাব। যদি সুষ্ঠ সমাধান না হয় তবে বিয়টি নিয়ে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের নিকট যাব।