ধুনট থানায় ওসির গ্রেফতার বাণিজ্য জমজমাট: টাকা না পেয়ে ভুয়া মামলায় ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার
বগুড়া সংবাদ ডট কম (ধুনট প্রতিনিধি ইমরান হোসেন ইমন) : বগুড়ার ধুনট থানায় জমে উঠেছে গ্রেফতার বাণিজ্য। টাকা না দিলেই ভুয়া মামলা সাজিয়ে গ্রেফতার করে হয়রানী করা হচ্ছে সাধারন মানুষদের। এছাড়াও রিমান্ডের ভয় দেখিয়ে হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে মোটা অঙ্কের টাকা। এমন অভিযোগ রয়েছে ধুনট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইসমাইল হোসেনের বিরুদ্ধে। গত বুধবার রাতে মুকুল হোসেন নামে এক ক্যাবল নেটওয়ার্ক ও ইন্টারনেট ব্যবসায়ীকে ভুয়া মামলা সাজিয়ে গ্রেফতার করে সমালোচনায় এসেছেন ওসি ইসমাইল হোসেন। শুধু ভুয়া মামলায় গ্রেফতার নয়, তাকে থানায় নিয়ে রিমান্ডের ভয় দেখিয়েও হাতিয়ে নিয়েছেন ২০ হাজার টাকা। গ্রেফতারকৃত মুকুল হোসেন ধুনট পৌর এলাকার চরপাড়া গ্রামের মৃত আব্দুল মান্নানের ছেলে। স্থানীয়সূত্রে জানাগেছে, দীর্ঘদিন যাবত মুকুল হোসেন ধুনট পৌর এলাকা সহ বিভিন্ন ইউনিয়নে ক্যাবল নেটওয়ার্ক ও ব্রড ব্যান্ড ইন্টারনেট সংযোগ দিয়ে ব্যবসা করে আসছেন। মথুরাপুর ইউনিয়নে ক্যাবল নেটওয়ার্ক ব্যবসা দেখাশোনা করেন ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি আমিনুল ইসলাম। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দীর্ঘদিন যাবত একটি চক্র মথুরাপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা থেকে ডিসলাইনের তার চুরি করে নিয়ে যায়। গত ২৪ নভেম্বর সন্ধ্যা ৭টায় পিরহাটি গ্রামের সোলায়মান আলীর সাব্বির পাশা সহ আরো কয়েক যুবক মথুরাপুর বাজারের একটি খুঁটির উপরে উঠে আমিনুল ইসলামের ডিস লাইনের তার চুরি করতে থাকে। এসময় স্থানীয় লোকজন দেখতে পেয়ে খুঁটির নিচে দাড়িয়ে থাকা সাব্বির পাশার দুই সহযোগিকে আটক করে। পরে খুঁটির উপর থেকে নিচে নামতে গিয়ে আহত হয় সাব্বির পাশা। যুবলীগ নেতা আমিনুল ইসলামের স্ত্রী তানিয়া ইসলাম বলেন, এঘটনায় কোন তদন্ত না করেই মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে আমার স্বামীর বিরুদ্ধে ভুয়া মামলা দায়ের করেছে ওসি ইসমাইল হোসেন। তবে মামলা দায়েরের আগেও কয়েক দফা বাড়িতে এসে ভয়ভীতি সহ অশালীন ভাষায় গালাগালিও করেছেন তিনি। ধুনট থানা হেফাজতে ব্যবসায়ী মুকুল হোসেন বলেন, ঘটনার সাথে কোন সম্পৃত্ততা না থাকলেও গত সোমবার রাতে ওসি ইসমাইল হোসেন আমাকে থানায় ডেকে নিয়ে মামলা থেকে নাম কাটার জন্য ৫০ হাজার টাকা দাবি করে। কিন্তু টাকা দিতে একটু দেরি হওয়ায় তিনি ভুয়া মামলা সাজিয়ে আমাকে গ্রেফতার করেছে। তবে থানায় নিয়ে আসার পরও আমাকে রিমান্ডে নেওয়ার ভয় দেখায় ওসি। পরে আমার এক আত্বীয়র মাধ্যমে ২০ হাজার টাকা ওসিকে দেওয়া হয়েছে। তবে শুধু মুকুল হোসেনই নয় তার মতো অনেক ব্যক্তিকেই ওসি ইসমাইল হোসেন বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে হয়রানী করে যাচ্ছেন। সাধারন মানুষদের অকারনে ধরে নিয়ে এসে মাদক দিয়ে ফাঁসিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেওয়ারও অভিযোগ রয়েছে ওসি ইসমাইল হোসেনের বিরুদ্ধে। এছাড়া গত এক বছর ধরে ধুনট থানায় এক জনের জমি অন্য জনকে দখলে দেওয়া, ইটভাটা মালিক, বালু ব্যবসায়ী, বিএনপি পন্থী ব্যবসায়ী, সিএনজি ও ভটভটির অবৈধ স্ট্যান্ড থেকেও নিয়মিত মাসোহারা আদায় করে যাচ্ছেন তিনি। তবে এসব বিষয় কেউ যাতে অভিযোগ না করে এজন্য ক্রস ফায়ারের ভয়ও দেখান ওসি। তবে ধুনট থানার ওসি ইসমাইল হোসেন তার বিরুদ্ধে গ্রেফতার বাণিজ্যের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, তদন্ত করেই মামলা দায়েরের পর একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এবিষয়ে বগুড়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (শেরপুর সার্কেল) গাজিউর রহমান বলেন, বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।