নন্দীগ্রামে কৃষকের ঘরে ঘরে নবান্ন উৎসবের আমেজ
বগুড়া সংবাদ ডটকম ( নন্দীগ্রাম প্রতিনিধি মো: এফএফ সরকার) : বাংলা মাস কার্তিক। অগ্রহায়ণের সঙ্গে গা ঘেঁষাঘেঁষি। শিশিরের মতো নীরবে আবির্ভাব। ষড়ঋতুর দেশে নবান্নের সুবার্তা নিয়ে আসে কার্তিক। ফসলের ক্ষেতে সোনালি হাসির আভা ছড়িয়ে পড়ে। কার্তিকের শুরুতেই থাকে মোলায়েম কুয়াশায় ছাতিম আর শিউলির মৃদুমন্দ সৌরভ, হিমেল ছোঁয়া। সকাল-সন্ধ্যায় হেমন্তের মিহি কুয়াশা। আশ্বিন গেল কার্তিক মাসে পাকিল ক্ষেতের ধান/সারামাঠ ভরি গাহিছে কে যেন হলদি কোটার গান/ধানে ধান লাগি বাজিছে বাজনা, গন্ধ উড়িছে বায়/কলমীলতায় দোলন লেগেছে, হেসে কূল নাহি পায়।্নক্সী-কাঁথার মাঠে কবি জসীমউদ্দীন এভাবেই কার্তিকের রূপলাবণ্য বর্ণনা করেছেন। দুই সপ্তাহ আগেই নবান্নের আমেজ শুরু হয়েছে বগুড়ার নন্দীগ্রাম উপজেলায়। জমিতে লাগানো আগাম জাতের আমন ধান কেটে ঘরে তোলা শুরু করেছেন কৃষকরা। চিরায়ত নিয়মে হেমন্তের মধ্যভাগে (প্রথম অগ্রহায়ণ) নতুন ধান ঘরে তোলার পর বাঙালির নবান্ন উৎসব শুরু হয়। বাংলার কৃষক সমাজ প্রাচীন কাল থেকে নবান্ন উৎসব পালন করে আসছে। কালের বিবর্তনে অনেক কিছু পরিবর্তন হলেও কৃষকরা নবান্ন উৎসব পালন করতে ভুলে যায়নি আজও। গ্রাম বাংলায় কৃষকেরা নবান্ন উৎসব পরিপূর্ণ ভাবে উদযাপনের জন্য মেয়ে জামাইসহ আত্মীয়-স্বজনদের বাড়ীতে আমন্ত্রণ করে এনে নতুন চালের পোলাও, পিঠা ও পায়েসসহ রকমারী নিত্য নতুন খাবার তৈরী করে ধুম-ধামে ভুঁড়ি ভোজের আয়োজন চলছে। নন্দীগ্রাম উপজেলার তৈয়বপুর গ্রামের কৃষক মোখলেছুর রহমান বলেন, গ্রাম্যবধুরা জামাইকে সাথে নিয়ে বাপের বাড়ীতে নবান্ন উৎসব করার জন্য অধির আগ্রহে অপেক্ষা করে। নবান্ন উৎসবে গ্রামের কৃষকেরা মিলে-মিশে গরু, মহিষ ও খাঁসি জবাই করে। হাট-বাজারের বড় মাছ কিনে আনে। এই নিয়মের ধারাবাহিকতায় কৃষকদের ঘরে ঘরে চলছে এখন ঐতিহ্যবাহী নবান্ন আমেজ। সব-মিলিয়ে নন্দীগ্রাম উপজেলার কৃষকেরা নবান্ন উৎসব পালনের সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিয়েছে। বাড়িতে বাড়িতে চলছে ঐতিহ্যবাহী বাৎসরিক নবান্ন উৎসব পালনের প্রস্তুতি। এদিকে এবার হেমন্তের শুরুতেই ঘরে উঠছে আগাম জাতের ধান। নির্ধারিত সময়ের আগেই পাকা ধান যেমন ঘরে উঠছে, তেমনি সেই ধানের ফলনও হয়েছে ভালো। তবে বাদ সাধছে ধান কাটার শ্রমিকরা। দ্বিগুণ টাকায় তাদের দিয়ে ধান কাটাতে হচ্ছে। আগাম জাতের আমন ধান কেটে ওই জমিতে রবিশষ্য আলু, সরিষা চাষ করবে এই উপজেলার কৃষকেরা। এতে একই জমিতে বছরে চারটি ফসল উৎপাদন করতে পারবে কৃষক। উপজেলা কৃষি অফিসার মুহাম্মদ মশিদুল হক জানান, এই উপজেলার কৃষকরা ১৯ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে রোপা আমন ধান চাষ করেছে। এরমধ্যে সাড়ে ৬ হাজার হেক্টর জমিতে আগাম জাতের ধান চাষ হয়েছে। তিনি বলেন, আগামী এক সপ্তাহ পর উপজেলা জুড়ে পুরোদমে ধান কাটা ও মাড়াই শুরু হবে।