করোনাকালেও বগুড়া শজিমেকে রক্ত নিয়ে দালালদের রমরমা বাণিজ্য
উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার কেউ আছে কি?
সঞ্জু রায়: জেলা প্রশাসনের বিভিন্ন ভ্রাম্যমান আদালত, র্যাব এবং পুলিশের বারবার অভিযান সত্ত্বেও বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজে (শজিমেক) করোনাকালীন এই ক্রান্তিকালেও কমছে না দালালদের দৌরাত্ব। প্রতিনিয়ত যাদের হাতে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে বগুড়াসহ দূর-দূরান্তের অসংখ্য অসহায় মানুষ। চিকিৎসা ও ঔষধ নিয়ে দালালি ও সিন্ডিকেটের খবর পুরোনো হলেও এখন দালালরা মানুষের দূর্বলতার সুযোগ নিয়ে মেতে উঠেছে রক্ত নিয়ে বাণিজ্য তে। ভুক্তভোগী একাধিক ব্যক্তি দ্রুততম সময়ে এই দালালদের উপযুক্ত শাস্তি নিশ্চিতকরণসহ শজিমেক কে দালালমুক্ত করার জোর দাবি জানিয়েছে।
সদ্য সড়ক দুর্ঘটনায় মুমূর্ষ এক ব্যক্তির জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে দালালদের মাঝে একজন আতঙ্কিত করে দিয়ে বি পজেটিভ গ্রুপের ২ ব্যাগ রক্ত ব্যবস্থা করার নামে হাতিয়ে নিয়েছেন ৫ হাজার ৮’শ টাকা। যে ঘটনায় বর্তমানে প্রতিবাদের ঝড় তুলেছে বগুড়ায় অবস্থানরত বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া সচেতন শিক্ষার্থীরা। জানা যায়, গত ২৫ জুলাই সকালে মোটরসাইকেল নিয়ে সিএনজির সাথে জয়পুরহাট জেলার পাঁচবিবিতে সড়ক দুর্ঘটনায় মারাত্মকভাবে আহত হয় যমুনা ব্যাংকে কর্মরত হাবিবুল হাসান নামে এক ব্যক্তি। এমতাবস্থায় তাকে নিয়ে তার ছেলে শিহাব হাসান বগুড়া শজিমেকে আসলে ডাক্তার জরুরী ভিত্তিতে রক্ত দিতে বলে। সে সময় ছেলে শিহাব ও তার সাথে থাকা এক বন্ধু তার বাবাকে একই গ্রুপের রক্ত দিতে চাইলে রুমের পাশে ওত পেতে থাকা হাসান নামের শজিমেকের এক দালাল হাজির হয়ে যায় বিপদগ্রস্থ সেই ছেলের কাছে। এসেই তাকে প্রথমে মানসিকভাবে দূর্বল করতে যা করা যায় সব করে ফেললেন তাকে বোঝালেন ছেলে হয়ে তার বাবাকে যদি সে একফোঁটাও রক্ত দেয় তাহলে তার বাবা তাৎক্ষণাৎ মারা যাবে। ছেলে তখন ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ এবং রক্তের জন্যে ডোনার ব্যবস্থা করতে চাইলে দালাল হাসান তখন নিজেকে শজিমেকের স্টাফ পরিচয় দিয়ে দ্রুত রক্ত না দিলে তার বাবা মারা যাবে এমন কথা বলে সে রক্ত ব্যবস্থা করতে পারবে মর্মে তার থেকে বিকাশে ৫ হাজার ৮’শ টাকা নেন এবং ফ্রিজিং করা ২ ব্যাগ রক্ত এনে দেন। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে অসহায় অবস্থায় থাকা সে ছেলেটি বুঝতে পারে তিনি বিপদগ্রস্থ অবস্থাতেও প্রতারিত হয়েছেন। শুধু তাই নয় জানা যায় দালাল হাসানসহ এই চক্রের সদস্যরা টাকার বিনিময়ে শজিমেকে করতে পারেনা এহেন কোন কাজ নেই।
ভুক্তভোগী সেই শিক্ষার্থী শিহাব জানান, হাসান নামের সেই দালালের খপ্পরে পরে তিনি যেভাবে প্রতারিত হয়েছেন যার যথেষ্ট প্রমাণ রয়েছে তার কাছে। সেটির পুনরাবৃত্তি আর কারো সাথে তিনি আর চাননা। তিনি বলেন শুধু ঐ লোক না শজিমেকের পদে পদে এমন দালাল দিয়ে ভর্তি যার অভিজ্ঞতা তার এই ২/৩ দিনেই হয়ে গেছে।
শিহাবের ঘনিষ্ঠ বন্ধু বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী ফায়াজ এর সাথে কথা বললে তিনি জানান, উক্ত ঘটনার পর তারা দালালদের বিরুদ্ধে মৌখিক অভিযোগ করেছেন জেলা প্রশাসনের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের। তিনি অভিযোগ করেন দায়িত্বশীল মহলের অসৎ কিছু ব্যক্তিবর্গ ও মেডিকেলের সামনে থাকা ফার্মেসীর দোকানগুলোর পরোক্ষ নেতৃত্বে এই অমানবিক কার্যক্রমগুলো চলছে। তারা সকলে ঐক্যবদ্ধভাবে এই চক্রের উপযুক্ত বিচার দাবি করেছেন।
এ বিষয়ে শজিমেকের উপ-পরিচালক ডা: আব্দুল ওয়াদুদের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, হাসান তাদের কোন স্টাফ নয়। যে অভিযোগ উঠেছে তা তারা লিখিত অভিযোগ পেলে প্রশাসনের মাধ্যমে অবশ্যই ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। এছাড়াও রশিদ ব্যতিত তিনি সকলকে কোন প্রকার টাকা লেনদেন না করার আহ্বান জানান।
এ প্রসঙ্গে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) ফয়সাল মাহমুদ জানান, এর আগেও কয়েকদফা সন্মিলিতভাবে এই শজিমেকে দালালদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালিত হয়েছে। যদি কেউ বা কোন গোষ্ঠী সাধারণ মানুষের এমন ক্ষতিসাধনের চেষ্টা করে তাহলে কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না। রক্ত নিয়ে বাণিজ্যের এই ঘটনা খতিয়ে দেখা হবে এবং অবশ্যই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে পুলিশের পক্ষ থেকে।