পশুর হাটে মানুষের ঢল ॥ স্বাস্থ্যবিধির বালাই নাই ॥ নেয়া হচ্ছে অতিরিক্ত খাজনা
শাজাহানপুর (বগুড়া) প্রতিনিধি জিয়াউর রহমানঃ করোনাকালিন বিধিনিষেধ উপেক্ষা করে জমজমাট ভাবে শুরু হয়েছে বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার ১০টি কুরবানী পশুরহাট। সামাজিক দুরত্ত বজায় রাখার তো প্রশ্নই উঠেনা মুখে মাস্ক পর্যন্ত ব্যবহার করছেন না হাটে আসা বেশীর ভাগ মানুষ।
অপরদিকে সরকারী তালিকার অতিরিক্ত খাজনা আদায়েরও অভিযোগ রয়েছে হাট ইজারাদারদের বিরুদ্ধে।
তবে হাট কর্তৃপক্ষ অতিরিক্ত খাজনা আদায়ের অভিযোগ অস্বীকার করে জানান, স্বাস্থ্যবিধি মেনে হাটে আসার জন্য মাইকিং করা হয়েছে। প্রবেশ মুখে মাস্ক বিতরণ ও মোড়ে মোড়ে হ্যান্ড স্যানিটাইজার ও হাত ধোয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
কিন্তু বাস্তব চিত্র উল্টো। উপজেলার বিভিন্ন হাটে সরেজমিনে দেখা গেছে, হাটে আসা বেশীর ভাগ মানুষের মুখে মাস্ক নেই। হাত ধোয়া বা হ্যান্ড স্যানিটাইজারেরও কোন ব্যবস্থা রাখা হয়নি। পশু কিনতে বা বিক্রি করতে নয় অনেকে এসেছেন হাট দেখতে আর পশুর দাম যাচাই করতে। হাজার হাজার মানুষের ঠেলাঠেলি দেখে যে কারো মনে হতে পারে দেশে যেন করোনা নেই। প্রশাসনও মনে হয় হাল ছেড়ে দিয়েছে।
শাজাহানপুর উপজেলার অন্তর্গত বগুড়া পৌরসভার ১৩ নং ওয়ার্ডের সুলতানগঞ্জ হাটসহ উপজেলায় মোট ১০টি কুরবানীর পশুর হাট রয়েছে। যদিও সুলতানগঞ্জ হাট ইজারা দেয়া হয় বগুড়া পৌরসভা থেকে। এছাড়া উপজেলার নয়মাইল হাট প্রতিবছর ইজারা দেয়া হলেও গত দুই বছর ধরে আইনী জটিলতার কারণে ইজারা বন্ধ রয়েছে। তারপরও অবৈধ ভাবে নিয়মিত হাট বসছে এবং স্থানীয় প্রভাবশালী রাজনৈতিক ও জনপ্রতিনিধিদের ইন্ধনে খাজনা আদায় করা হচ্ছে। সপ্তাহের প্রতিদিনই কোথাও না কোথাও হাট বসে। সুলতানগঞ্জহাট শুক্র ও সোমবার, দুবলাগাড়ী শনি ও মঙ্গলবার, নয়মাইল সোম ও বৃহস্পতিবার, আতাইল বুধ ও রবিবার, গোহাইল ও টেংরামাগুর সোম ও বৃহস্পতিবার, উমরদীঘি শনি ও মঙ্গলবার এবং রানীরহাট রবি ও বুধবার, ডোমনপুকুর বুধবার এবং খরনা রবিবার পশুর হাট বসে।
উপজেলার সবচেয়ে বড় পশুর হাট সুলতানগঞ্জ ও দুবলাগাড়ী হাট। প্রশাসনের পক্ষ থেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে উপজেলার পশুর হাট বসানোর অনুমতি দেয়া হলেও শুক্রবার ও শনিবার বিকেলে সরেজমিনে দেখা গেছে, সরকার ঘোষিত চলমান বিধি-নিষেধ উপেক্ষা করে দুপুর থেকে কুরবানীর পশু কেনা-বেচা শুরু হয়। সুলতানগঞ্জ হাটের অবস্থান বগুড়া শহরতলী হওয়ায় জেলা সদর ও আশপাশের উপজেলা থেকে হাজারও ক্রেতা-বিক্রেতার সমাগম ঘটে। কিন্তু হাটে আসা বেশীর মানুষকে মাস্ক ব্যবহার করতে দেখা যায়নি। হ্যান্ড স্যানিটাইজার বা হাত ধোয়ার কোন ব্যবস্থা চোখে পড়েনি। তবে আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদেরকে হাটে ঘোরাঘুরি করতে দেখা গেছে। অপর দিকে ক্রেতা ও বিক্রেতার কাছ থেকে সরকারী তালিকার অতিরিক্ত খাজনা নেয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন ক্রেতা-বিক্রেতারা। করোনাকালিন সময়ে স্বাস্থ্যবিধি ও খাজনা নিয়ন্ত্রণে রাখতে প্রশাসনের নজরদারীর পাশাপাশি ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনার দাবী জানান অনেকে।
বকসিবাজার এলাকার মুন্না নামে একজন ক্রেতা জানান, তিনি ৮৭ হাজার টাকায় একটি গরু কিনেছেন। খাজনা দিতে হয়েছে ৮০০ টাকা। অপরদিকে বিক্রেতা চকজোড়া এলাকার জাহাঙ্গীর আলম জানান, বিক্রেতা হিসেবে তিনি ২০০ টাকা খাজনা দিয়েছেন।
এছাড়া ছাগল প্রতি বিক্রেতার কাছ থেকে ১০০ এবং ক্রেতার কাছ থেকে ৪০০ টাকা খাজনা নেয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে।
শনিবার দুবলাগাড়ী হাট থেকে বুলু মিয়া নামে এক ব্যক্তির কাছ থেকে ১৪ হাজার ৬০০ টাকায় ছাগল কেনেন মাড়িয়া গ্রামের আব্দুর রহিম। তার কাছে যে খাজনার রশিদ দেয়া হয়েছে সেখানে তারিখ, ক্রেতা-বিক্রেতার নাম এবং পশুর দাম ছাড়া খাজনার পরিমান লেখা নাই। তবে ক্রেতা আব্দুর রহিম জানান, খাজনার রশিদে কি লেখা আছে জানি না। তবে তার কাছ থেকে ৪০০ টাকা খাজনা নেয়া হয়েছে।
সুলতানগঞ্জ হাটের ইজারাদার রইচ উদ্দিনের সাথে কথা বলতে চাইলে তিনি ব্যস্ততা দেখিয়ে কোন কথা বলতে রাজি হননি।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার আসিফ আহমেদ জানান, স্বাস্থ্যবিধি মেনেই হাট কর্তৃপক্ষকে পশুর হাট নিয়ন্ত্রণ করার জন্য নির্দেশনা দেওয়া আছে। এছাড়া উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মনিটরিং অব্যাহত রয়েছে। অতিরিক্ত খাজনা নেয়ার অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।