গণধর্ষণের পর ভিডিও ধারণ করে হুমকি ॥ গ্রেপ্তার ৪
শাজাহানপুর (বগুড়া) প্রতিনিধি জিয়াউর রহমানঃ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক গ্রুপে গৃহবধুর (১৯) সাথে পরিচয়ের সূত্র ধরে পরকিয়ার সম্পর্ক। ক্রমেই গভীর সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে তারা। এরপর ওই গৃহবধুকে কৌশলে নিজ এলাকায় ডেকে এনে এক বন্ধুর ফাঁকা বাড়িতে নিয়ে গিয়ে প্রথমে পরকিয়া প্রেমিক পরে তার এক বন্ধু ধর্ষণ করে। এরপর ধর্ষণের ভিডিও ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ করার হুমকি দিয়ে টাকা দাবী করে ধর্ষণকারীরা।
ঘটনাটি ঘটেছে বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার আড়িয়া ইউনিয়নের রহিমাবাদ উত্তরপাড়া এলাকায়। এঘটনায় ৪ জনকে গ্রেপ্তার করেছে আইন-শৃংখলারক্ষাকারী বাহিনী। শুক্রবার বিকেলে গ্রেপ্তারকৃতদেরকে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠিয়েছে পুলিশ।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলো, উপজেলার আড়িয়া ইউনিয়নের রহিমাবাদ উত্তরপাড়ার আলম মিয়ার ছেলে পরকিয়া প্রেমিক রাব্বী (২০), ফুলকোট গ্রামের শফিকুল ইসলামের ছেলে আব্দুল্লাহ (১৯), রহিমাবাদ উত্তরপাড়ার আব্দুল মান্নানের ছেলে আরেফীন (৩০) ও তার ছোটভাই নিশাদ (২০)।
জানা গেছে, তিন মাস আগে বগুড়ার শেরপুর উপজেলার ভবানীপুর গ্রামের এক গৃহবধুর সাথে ফেসবুক গ্রুপে পরিচয়ের জের ধরে পরকিয়া সম্পর্ক গড়ে উঠে শাজাহানপুর উপজেলার রহিমাবাদ উত্তরপাড়ার আলম মিয়ার ছেলে রাব্বীর (২০)। গত মঙ্গলবার বিকেলে রাব্বী ওই গৃহবধুকে ফোন করে নিজ এলাকায় ডেকে এনে হিমেল নামে এক বন্ধুর ফাঁকা বাড়িতে নিয়ে যায়। সেখানে প্রথমে পরকিয়া প্রেমিক রাব্বী পরে তার বন্ধু আরেফীন তাকে ধর্ষণ করে এবং অপর ৩ সহযোগী আব্দুল্লাহ, ফিরোজ ও আরেফীনের ছোটভাই নিশাদ মোবাইলে ধর্ষণের ভিডিও ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ করার হুমকি দিয়ে টাকা দাবী করে। টাকা দিতে না পারায় গৃহবধুর শরিরে থাকা স্বর্ণালংকার ছিনিয়ে নিয়ে তাকে ফেলে রেখে চলে যায় ধর্ষণকারীরা। একপর্যায়ে অসুস্থ্য অবস্থায় গৃহবধু বাড়িতে ফিরে বিষয়টি স্বজনদের জানায়। এরপর স্বজনেরা প্রথমে ওইদিন রাতে শেরপুর পুলিশ ফাঁড়িতে যায়। ঘটনাস্থল শাজাহানপুর থানা এলাকা হওয়ায় সেখানকার পুলিশ শাজাহানপুর থানায় জানাতে বলে। এমতাবস্থায় পরদিন বুধবার বিষয়টি ধামাচাপা দেয়ার জন্য আপোষ-মিমাংসার চেষ্টা করা হয়। এতে ব্যর্থ হয়ে ওই গৃহবধুসহ তার স্বজনদেরকে বিভিন্ন ধরনের হুমকি-ধামকি দেয়া হয়। পরে বৃহস্পতিবার স্বজনেরা শাজাহানপুর থানায় না গিয়ে বগুড়া র্যাব-১২ ক্যাম্পে গিয়ে বিষয়টি জানায়। এর আগে স্থানীয় এক সাংবাদিক ধামাচাপা দেয়ার বিষয়টি জানতে পেরে শাজাহানপুর থানার ওসিকে জানান। কিন্তু বাদী থানায় না আসায় ওসি তা আমলে নেননি। পরে জেলা পুলিশের তৎপরতায় র্যাব, পুলিশ ও গোয়েন্দা পুলিশ সদস্যরা অভিযান চালিয়ে উপজেলার বি-ব্লক ও বনানী এলাকা থেকে ৪ জনকে গ্রেপ্তার করে। এঘটনায় ধর্ষিতা ওই গৃহবধু বাদি হয়ে ৫ জনকে আসামী করে শাজাহানপুর থানায় মামলা দায়ের করেন। গ্রেপ্তারকৃত আসামীরা মাদক, চুরি, ছিনতাইসহ বিভিন্ন ধরনের অপরাধের সাথে জড়িত। থানায় একাধিক মামলাও রয়েছে।
ধর্ষিতার স্বামী জানান, পূর্বপরিকল্পিত ভাবে ধর্ষণের পর ভিডিও ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ করার হুমকি দিয়ে টাকা হাতিয়ে নেয়ার চেষ্টা করেছিল আসামীরা। ঘটনার সাথে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবী করেন তিনি।
থানার ওসি আব্দুল্লাহ আল মামুন মামলা দায়েরের বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, গ্রেপ্তারকৃত আসামীদেরকে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজাতে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। অপর আসামীকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।