বগুড়া সংবাদ ডটকম (গাবতলী প্রতিনিধি জাহাঙ্গীর আলম লাকী) : বুধবার এক উৎসবমুখর পরিবেশে সম্পন্ন হলো বগুড়া গাবতলীর ঐতিহ্যবাহী পোড়াদহ মেলা। মাছ ও মিষ্টির জন্য বিখ্যাত হয়ে উঠা এই মেলায় আগে বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষের পদচারনায় মুখর হয়ে উঠতো। কিন্তু এবার মেলাতে মানুষের উপস্থিতি ছিল অনেকটাই কম। মেলায় গাবতলীর চকমড়িয়া গ্রামের মাছ ব্যবসায়ী ভোলা, বিশাল আকৃতির বাঘাইড় মাছ মেলায় নিয়ে এসেছেন। যমুনা নদীর ৮০কেজি ওজনের একটি বাঘাইড় কেটে বিক্রি করছেন ১২শ টাকা কেজি দরে। আর ১’শ কেজি ওজনের বিশাল আকৃতির বাঘাইড় মাছটি বিক্রি হবে ১২ শ ৫০ টাকা কেজিতে। মাছ ব্যবসায়ী আক্কাস আলী যমুনা নদীর ৭০ কেজি ওজনের একটি বাঘাইড় মাছ মেলায় নিয়ে এসেছেন। তিনিও একই দামে বিক্রি করছেন। শেরপুরের মুন্নু ব্যাপারীর মাছের দোকান থেকে ১৬কেজি ওজনের একটি বোয়াল কিনলেন শিবগঞ্জের জাহিদুল ইসলাম। ক্রেতা জাহিদুল বলেন, গতবারের চেয়ে এবারের মেলায় মাছের দাম একটু বেশী বেশীই মনে হচ্ছে। মেলায় আসা (জামাই) সোহানুর রহমান সোহাগ একটি বড় ব্রিগেড মাছ কিনেছেন। তিনি জানান, পছন্দের মাছ হওয়ায় দামটা একটু বেশীই নিয়েছে। এছাড়া এই মেলায় ১৭ কেজি ওজনের বোয়াল মাছের দাম হাকানো হয়েছে প্রতি কেজি ১৬শ টাকা, ১৫ থেকে ১৮ কেজি ওজনের কাতলা মাছ ২২’শ টাকা কেজি, ৮ থেকে ১০ কেজি ওজনের কাতলা মাছ ১২ ’শ টাকা, ১০ কেজির উপরে আইড় মাছ ১২ ’শ থেকে ১৫’শ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। রুই বিক্রি হচ্ছে ৬’শ টাকা, চিতল ৪’শ টাকা, পাঙ্গাস ৩’শ টাকা, ব্রিগেড ৩’শ ৫০টাকা, ব্লাডকাপ ৭’শ টাকা, সিলভার ৪’শ টাকায়। এছাড়া অন্যান্য জাতের মাছ উঠেছে মেলায়। মেলার জন্য ১০ কেজি ওজনের মাছ আকৃতির মিষ্টি তৈরী করেছেন ব্যবসায়ী আব্দুল লতিফ। মহিষাবান এলাকার ব্যবসায়ী লতিফের দোকানে এ মিষ্টির দাম হাকানো হয়েছে ৪ হাজার টাকা। এছাড়া এক কেজি, দুই কেজি, ৩ কেজি, ৪ কেজি ওজনের মিষ্টিও মেলায় পাওয়া যাচ্ছে বিভিন্ন নামে। লতিফের মিষ্টির দোকানে ২’শ মন মিষ্টি রয়েছে- যা তিনি মেলার দিনেই বিক্রির জন্য তৈরী করেছেন। এছাড়াও প্রতিটি দোকানে শত শত মন মিষ্টি বেচা-কেনা হয়েছে। এছাড়াও কাঠ ও ষ্টীলের ফানির্চার গত বারের চেয়ে এবার মেলায় কম উঠেছে। প্রতি বছরের মেলায় লাখো মানুষের ভীর থাকলেও এবারের মেলা মানুষের মধ্যে তেমনভাবে সারা পড়েনি। এবারের মেলায় মাছ, মিষ্টি, বড়ই (কুল), ফার্নিচার কস্মেটিকসহ যেসব জিনিস হাট-বাজারের মতোই কেনাবেচা হয়েছে। এছাড়াও গাবতলীর দূর্গাহাটা, দাঁড়াইল বাজার, বাইগুনি হাটসহ বিভিন্ন বাজারে বাজারে মাছ-মিষ্টির মেলা বসেছিল। উপজেলার মহিষাবান ইউনিয়নের গোলাবাড়ী বন্দর সংলগ্ন পোড়াদহ নামক স্থানে প্রায় ২’শ বছর পূর্বে থেকে স্থানীয় সন্ন্যাসী পূঁজা উপলক্ষে গাড়ীদহ নদী ঘেঁষে সম্পূর্ণ ব্যক্তি মালিকানা জমিতে একদিনের জন্য মেলাটি প্রতি বছর হয়ে থাকে। তবে এক দিনের মেলা হলেও তিনদিন পর্যন্ত মেলা হয়। মেলা উপলক্ষে পাশ্ববর্তী উপজেলাসহ আশেপাশের বিভিন্ন জেলা থেকে বিভিন্ন শ্রেনী পেশার মানুষের মিলন মেলায় পরিনত হয় এ মেলা প্রাঙ্গন। তবে ঐতিহ্যবাহী পোড়াদহ মেলা এবার অন্যস্থানে অল্প জায়গায় অনুষ্ঠিত হয়েছে। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের সাথে বিরোধে মন্ডল পরিবারের জমির মালিকেরা এবার পোড়াদহ মেলার নির্ধারিত স্থানে আগেভাগেই বোরো ধানের চারা রোপন করেছেন। ২’শ বছরের ঐতিহ্যবাহী পোড়াদহ মেলা এবার একেবারেই অল্প জায়গায় ভিন্নস্থানে অনুষ্ঠিত হলো। স্থানীয় সমাজসেবক ওয়াজেদ হোসেন জানান, হাজার হাজার মানুষের পদচারণা হয়ে থাকে এ মেলায়। তবে স্থানীয় প্রভাবশালী ইউপি চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলামের কারনে এবার অন্যস্থানে খুব অল্প জায়গায় মেলা বসেছে। তারপরেও উৎসব থেমে নেই। জামাই মেয়েসহ আত্মীয় স্বজনদের পদচারনায় মুখর হয়ে উঠেছে গোটা এলাকা। মেলায় শিশুদের জন্য বিনোদনমূলক বিচিত্র গান, নাগোরদোলা, চরকি, সার্কাস এবং মটরসাইকেল খেলা ছিল। গাবতলী মডেল থানার ওসি খায়রুল বাসার বলেন, পোড়াদহ মেলাটি সুন্দর ও সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দ্বারা কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা করা হয়েছিল।