বগুড়া সংবাদ ডট কম রাহেনূর (সারিয়াকান্দি প্রতিনিধি ইসলাম স্বাধীন) : বগুড়ার সারিয়াকান্দিতে চাঞ্চল্যকর নাঈম হত্যা কান্ডের রহস্য ক্রামের উন্মোচিত হচ্ছে। বগুড়া শহরে বেসরকারী পলিটেকনিক বিট চতুর্থ বর্ষের ছাত্র নাঈমের মটরসাইকেল লোপাট করার জন্য পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী ১৫ নভেস্বর তাকে নির্মমভাবে খুন করে সারিয়াকান্দি পৌর ছাত্রলীগের বহিষ্কারকৃত সাধারণ সম্পাদক অন্তর শ্রাবণ বিশু।
বৃহস্পতিবার রাতে সারিয়াকান্দি থানায় সাংবাদিকদের বিশুর এধরনের স্বীকারোক্তির কথা জানান সহকারি পুলিশ সুপার গাবতলী সার্কেল তাপস কুমার পাল। এছাড়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোঃ আল আমিন মূল রহস্য উম্মোচন হলেও তদন্ত চলমান রয়েছে বলে জানিয়েছেন।
সংবাদ সম্মেলনে সহকারি পুলিশ সুপার গাবতলী সার্কেল জানান, ঘটনার দিন সকালে সারিয়াকান্দি বাজারের পূর্ব পাশ্বে পরিত্যাক্ত জায়গায় নাঈমের আগুনে পোড়ানো ভয়ংকর মৃতদেহ টি পাওয়া যায়। পরে হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত সন্দেহে নাঈমের মাতার অভিযোগে তার চার বন্ধুসহ সারিয়াকান্দি পৌর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক অন্তর শ্রাবণ বিশুকে আটক করে সারিয়াকান্দি থানা পুলিশ। ঘটনার পরের দিন উপজেলার সদর ইউনিয়নের বড়রবাড়ী বা রামকৃষপুর গ্রাম থেকে পরিত্যাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করা হয় নাঈমের ব্যবহৃত এ্যাপাচী মটরসাইকেল।
ঘটনার ৪৮ ঘন্টা অতিবাহিত না হতেই পুলিশ বিশুর ভাড়া বাসা থেকে উদ্ধার করে হত্যার ব্যবহৃত রক্ত মাখা ছুরি, বালিশ, কাপড়, নাঈমের মানিব্যাগ, জুতাসহ ঘটনার বিভিন্ন আলামত। এই ঘটনায় গত ১৯ নভেম্বর সারিয়াকান্দি থানা পুলিশ গ্রেফতারকৃতদের আদালতে হাজির করে ৫ দিনের রিমান্ড আবেদন করলে আদালত সবকিছু শুনে দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এর পর জিজ্ঞাসাবাদে বেড়িয়ে আসে হত্যার ভয়াবহ ও রিক্ত হীম করা সব রহস্য। খুনি অনন্ত শ্রাবণ বিশু নিজেই ঘটনার লোমহর্ষক বর্ণনা দেন।
পূর্ব থেকেই নিহত নাঈম তার বন্ধুদের সাথে সারিয়াকান্দিতে বেড়াতে আসার সুযোগে ১৪ই নভেম্বর বিশুর এক সহযোগীর সাথে নাঈমের মটর সাইকেল লোপাট করার পরিকল্পনা করে ঘাতক বিশু। সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী ১৪ই নভেম্বর সকাল থেকে সারিয়াকান্দি বিভিন্ন এলাকায় বন্ধুদের সাথে ঘুড়ে বেড়িয়ে দুপুরে বিশুর ভাড়া বাসায় আসলে বিশু এবং তার অপর এক সহযোগী কৌশলে নাঈম কে কোমল পানীয়র সাথে ঘুমের ঔষধ পান করান। পরে নাঈমের বন্ধু সাব্বির ও তার মেয়ে বন্ধুকে বিশুর শয়ন কক্ষে রাখেন। নাঈম ও তার বন্ধু মনি এবং বিশু এ্যালকোহল (চোরাই মদ) সংগ্রহ করেন পার্শ্ববর্তী ফুলবাড়ী ইউনিয়ন থেকে এবং তা সবাই পান করেন। পরে নাঈমের বন্ধু মনির নেশায় কাতর হয়ে পড়লে তাকে বিশুর বাসা বাড়ীর অদূরে একটি বাড়িতে বিশ্রাম করতে রেখে আসেন বিশু। সেই সাথে বিশুর শয়ন কক্ষে নাঈমের বন্ধু সাব্বির তার মেয়ে বন্ধুকে নিয়ে ফুর্তি করার সুবাদে অচেতন প্রায় নাঈম কে বিশুর ভাড়া বাসার অপর একটি কক্ষে শুয়ে রেখে বাহিরে মদ পান করতে যান বিশু ও তার সহযোগী। মদ্যপান করে ফিরিয়ে আসে প্রায় বিকাল ৫টায় নাঈমের বন্ধু সাব্বির তার মেয়ে বন্ধুকে নিয়ে চলে গেলে বিশু এবং তার সহযোগী নাঈমকে তার নিজ শয়ন কক্ষে নিয়ে আসলে বাড়ীতে কেউ না থাকায় এই সুযোগে অচেতন নাঈমের হাত এবং মুখ টেপ দিয়ে আটকে দেয় বিশু ও তার সহযোগী। প্রথমে বিশুর সহযোগী নাঈমের পেটে ছুরিকাঘাত করে এবং পরে বিশু আঘাত করেন।এ সময় রক্তাক্ত চাকু পিচ্ছিল থাকায় পিছলে গেলে বিশুর হাতের ৪টি আঙুল আংশিক কেটে যায়। এ সময় পর্যায়ক্রমে বেশ কয়েকবার নাঈমের পেটে ছুরিকাঘাত করার পর মৃত্যু নিশ্চিত করার জন্য নাঈমকে জবাই করেন বিশু। এ সময় বিশু সহযোগী নাঈমের পা শক্তকরে চেপে ধরে থাকেন। জবাই করে নাঈমের মৃতদেহ ঘরে রেখে বিশু সহযোগীকে রক্ত সহ বিভিন্ন আলামত সরাতে দিয়ে নাঈমের মটর সাইকেল যোগে সারিয়াকান্দি হাসপাতালে গিয়ে ঘটনার সময় কেটে যাওয়া হাত সেলাই করে নেন বিশু। চিকিৎসা শেষে সদর ইউনিয়নের বিশুর পরিচিত একজন কে নিজের মটর সাইকেল বলে নাঈমের মটর সাইকেল টি রাখতে বলেন। ঘটনার জানাজানি হলে মটরসাইকেল নিয়ে যাওয়ার সেই যুবক মটরসাইকেলটি ধান ক্ষেতে রেখে আসলে এবং মটরসাইকেলটি সেখান থেকে পুলিশ উদ্ধার করেন। পরে সুযোগ বুঝে রাত আনুমানিক দুইটার সময় বিশু এবং তার সহযোগী নাঈমের মৃতদেহ বস্তায় করে বিশুর বাড়ী থেকে কয়েকশ গজ দূরে নির্জন স্থানে নিয়ে নাঈমের পরিচয় লোপাট করার জন্য পলিথিন দিয়ে মুড়িয়ে মৃতদেহটিতে আগুন জ্বালিয়ে দেন। পরদিন সকালে এলাকায় উত্তেজনা সৃষ্টি হলে আংশিক দগ্ধ অবস্থায় নাঈমের লাশ উদ্ধার করেন থানা পুলিশ।
এই ঘটনায় ঘাতক বিশু ১৬৪ ধারায় আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন সারিয়াকান্দি থানা অফিসার ইনর্চাজ (ওসি) মোঃ আল আমিন। তিনি আরো বলেন, ঘটনার মূল রহস্য উম্মোচন হলেও তদন্ত চলমান রয়েছে। এই ঘটনায় জরিতরা যাতে করে সর্বোচ্চ সাজা পায় সে ব্যাপারে পুলিশ এই মামলার বিভিন্ন আলামত তথ্য আদালতে জোড়ালো ভাবে উপস্থাপন করবে।
এদিকে ঘটনার সহস্য পুলিশ জানানোর পর থেকে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় জনমনে ঘাতক বিশুর ওপর তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। এবং সেই সাথে অল্প সময়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখায় আন্তরিক ধন্যবাদ জানিয়েছেন উপজেলাবাসী।
বগুড়ার সারিয়াকান্দিতে নাঈম হত্যা কান্ড; মটর সাইকেলের জন্য খুন করেছে বিশু
Facebook Comments (ফেসবুকের মাধ্যমে কমেন্ট করুন)